ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪

পেকুয়ায় খাস জমিতে তৈরী হচ্ছে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন!

মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া ::  কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার বৃহত্তম বানিজ্যিক কেন্দ্র পেকুয়া আলহাজ¦ কবির আহমদ চৌধুরীস্থ সদর ইউপি কার্যালয়ের উত্তর পার্শ্বে কয়েক কোটি টাকা মূল্যমানের ২৬ শতক সরকারী খাস জমিতে তৈরী বহুতল বাণিজ্যি ভবন! বন্দোবস্ত গ্রহীতা চট্টগ্রামের একটি নির্মাণকারী প্রতিষ্টানের মাধ্যমে উক্ত বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ বাস্তবায়ন করছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। সরেজমিনে গিয়ে এর সত্যতাও মিলেছে। ভবন নির্মাণের কাজ শেষ না হলেও ইতিমধ্যেই ভবনের নিচতলার সব দোকান প্রতিটি ৮/১২ লাখ টাকা ধরে অগ্রীম বুকিংও দিয়েছেন রেখেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীর ও বিভিন্ন ব্যক্তি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেকুয়া বাজারের মূল কেন্দ্রে অবস্থিত বিএস খতিয়ান নং ০১ এর বিএস দাগ নং ৪৬৭০/১ এর ২৬ শতক সরকারী খাস জমি ভূমিহীন না হলেও বিগত ২০১৪ ইংরেজীতে দীর্ঘ মেয়াদে বন্দোবস্ত পাওয়ার জন্য আবেদন করেন পেকুয়া জমিদার বাড়ির মৃত আবুল কাসেম চৌধুরীর পুত্র সাজ্জাদুল কবির চৌধুরী (রণি)। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় গত ২৬/০৫/২০১৪ ইংরেজী তারিখে ২৫৫১ স্মারকে ও ০৩/০৯/২০১৪ইংরেজী তারিখ ৪৩৩৮ নং স্মারকে ওই খাস জমি আবেদনকারীর অনুকূলে দীর্ঘ মেয়াদে বন্দোবস্ত প্রদানের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের খাস জমি শাখা-১ এর কাছে সুপারিশ প্রেরণ করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার উপ-সচিব শেখ আতাহার হোসেন স্বাক্ষরিত বিগত ১০/১১/২০১৪ইংরেজী তারিখ ৭৯২/১(৩) নং স্মারকমূলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক এর কাছে একটি চিঠি প্রেরণ করা হয়। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, জেলা প্রশাসক কার্যালয়, কক্সবাজারের প্রস্তাব ও সুপারিশের আলোকে কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলাধীন পেকুয়া মৌজার বিএস খতিয়ান নং ০১ এর বিএস দাং নং ৪৩৭০ নং দাগের ২৬ শতক নাল শ্রেণীর জমি অকৃষি খাস জমি ব্যাবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত নীতিমালা ১৯৯৫ এর ৩(উ) অনুচ্ছেদমতে ২২লক্ষ্য ৭৬ হাজার ৮’শ টাকা সেলামীতে সাজ্জাদুল কবির চৌধুরী (রণি) এর অনুকূলে শর্তে দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্ত প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এরপর কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সাজ্জাদুল ইসলাম চৌধুরীকে উক্ত জমি বন্দোবস্ত প্রদান করেন!
স্থানীয় বাসিন্দা আনসার হোসেন জানান, সাজ্জাদুল কবির চৌধুরীর পরিবার প্রভাবশালী ও অর্থ সম্পদের মালিক। তাদের জমিও রয়েছে। তারা ভূমিহীন নয়। এরপরেও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় তার নামে সরকারী খাস জমি বন্দোবস্ত প্রদানের জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেছিল। বন্দোবস্তের পুরো প্রক্রিয়ায় অনিয়ম-দূর্নীতির মাধ্যমে করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। পেকুয়া বাজারের ওই ২৬ শতক জমি মহা মূল্যবান। বাজারে কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত। কয়েকটি মূল্যমানের খাস জমি পানির দরে সাজ্জাদুল ইসলাম চৌধুরীকে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। তিনি এ বন্দোবস্ত বাতিলের দাবি জানান।
অপরদিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কাযালয় থেকে বন্দোবস্ত পাওয়ার পর সাজ্জাদুল কবির চৌধুরী গত কয়েক মাস পূর্বে ওই খাস জমিতে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন। গত ০৩/০৩/২০২০ইংরেজী তারিখ বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের জন্য কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রাজস্ব শাখা থেকে তাকেও লিখিত অনুমতিও প্রদান করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মাহদুল করিম অভিযোগ করে জানান, ব্যক্তি পর্যায়ে ওই ২৬ শতক জমি বন্দোবস্ত না দিয়ে সরকারী ব্যবস্থাপনায় বানিজ্যিক মার্কেট নির্মাণ করা হলে প্রতি মাসে মাসে দোকান ভাড়া বাবদ সরকারী কোষাগারে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব জমা হতো। এখন সরকারী খাস জায়গায় বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ডেভেলপার কোম্পানি ও খাস জমির বন্দোবস্ত গ্রহীতা প্রভাবশালী সাজ্জাদুল কবির চৌধুরী রণি। পেকুয়া বাজারের মূল্যবান ও খাস জমি ইজারা প্রক্রিয়ায় কোন অসংগতি, অনিয়ম-দূর্নীতি হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্য দূর্নীতি দমন কমিশনের হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন।
পেকুয়া সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার মো: রফিকুল আলম জানান, পেকুয়া বাজার ইউনিয়ন পরিষদ সড়কের পাশে ওই ২৬ শতক জমি খুবই মূল্যবান। ব্যক্তি পর্যায়ে কিভাবে বন্দোবস্ত প্রদান করা হয়েছে তিনি কিছুই জানেন না। তার কার্যালয়ে এ বিষয়ে কোন কাগজও আসেনি।
এ ব্যাপারে বন্দোবস্ত গ্রহীতা সাজ্জাদুল কবির চৌধুরী (রণি) এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওই জমি তাদের পূর্ব পুরুষদের। জরীপের সময় ভূল খাস হয়ে যায়। এ জন্য তিনি ওই ২৬ শতক জমি দীর্ঘ মেয়াদে সরকারের কোষাগারে রাজস্ব প্রদান করে বন্দোবস্ত নিয়েছেন। অকৃষি জমি হওয়ায় তিনি বন্দোবস্তকৃত জমিতে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের কাজ করছেন। তিনি বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তিনি খাস জমি বন্দোবস্ত নিয়েছেন। এখানে কোন অনিয়ম-দূর্নীতির মাধ্যমে জমি বন্দোবস্ত নেওয়া হয়নি।

পাঠকের মতামত: